ব্যর্থতার দায় শেখ হাসিনার নয়,দায় জনপ্রতিনিধির: দোলন
সারা দেশের উন্নয়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কোনো স্থানীয় এলাকার উন্নয়ন না হওয়া সেখানকার জনপ্রতিনিধিদের ব্যর্থতা বলে মন্তব্য করেছেন ফরিদপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন-প্রত্যাশী আরিফুর রহমান দোলন।
তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা দেশের উন্নয়ন করছেন, তার কাছে চেয়ে আনতে না পারা শেখ হাসিনার দায় নয়, জনপ্রতিনিধির ব্যর্থতা। প্রয়োজনে জনপ্রতিনিধি বদলানোর তাগিদ দিয়ে তিনি সবাইকে আবার শেখ হাসিনার নৌকায় ভোট দেয়ার আহ্বান জানান।
আজ শুক্রবার বিকালে ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার জাননগর মহিলা সংঘের উদ্যোগে সাত দিনব্যাপী ভাগবতীয় আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন দোলন।
কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সহসভাপতি দোলন ফরিদপুরের এই এলাকার যথাযথ উন্নয়ন না হওয়া নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন,আজকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়ন করছেন। সারা দেশে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হচ্ছে। এ অঞ্চলের উন্নয়ন কেন হবে না। এই দায়িত্ব কার, এর জবাব কে দেবে।
ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের এই কার যনির্বাহী সদস্য বলেন,আমি বিশ্বাস করি আপনারা সবাই নৌকা মার্কায় ভোট দেন। নৌকা মার্কা হচ্ছে উন্নয়নের মার্কা। তাহলে কেন এ রাস্তা কাঁচা? এই প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন,আমরা যারা রাজনীতিতে আছি, ভোটের সময় আপনাদের কাছে যাব আর ভোটের পরে খবর থাকবে না- এটা কিন্তু রাজনীতি না। এটা জনগণের উন্নয়নের রাজনীতি না।
এ অঞ্চলের উন্নয়ন না হওয়ার পেছনে জনপ্রতিনিধির ব্যর্থতাকে দায়ী করেন ঢাকাটাইমস সম্পাদক দোলন। না কাঁদলে মাও দুধ দেয় না প্রবচনটি উল্লেখ করে তিনি বলেন,প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়ন করতে চান। কিন্তু এখানে বোঝা যাচ্ছে শেখ হাসিনার কাছে ঠিকমতো চাওয়া হচ্ছে না। আমরা যদি শেখ হাসিনার কাছ থেকে কিছু আনতে না পারি, এটা আমাদের ব্যর্থতা, জনপ্রতিনিধিদের ব্যর্থতা।
সমবেত জনগণের উদ্দেশে দোলন বলেন,আপনাদের ভোটে যারা নির্বাচিত হয়েছেন, শেখ হাসিনার কাছ থেকে আনার দায়িত্ব তাদের। আপনারা জনগণ হচ্ছেন মনিব। আর যারা নির্বাচিত হন তারা হচ্ছেন আপনাদের সেবক। আপনাদের সেবা করাই জনপ্রতিনিধিদের কাজ। তারা আপনাদের সেবাটা ঠিকমতো করছেন না।
যারা নির্বাচিত হন, তারা সরকার থেকে অর্থকড়িসহ নানা সুবিধাদি পান। ঢাকাটাইমস সম্পাদক বলেন,আপনাদের টাকায় তাদের এসব সুবিধা দেয়া হয়। আপনাদের ভ্যাট ট্যাক্সের টাকায় তারা এসব সুবিধা পান। কিন্তু আপনারা যদি সুবিধা না পান, দুঃখে-কষ্টে থাকেন, তাদের সুবিধা পাওয়ার কোনো অধিকার নেই।
আলফাডাঙ্গা, বোয়ালমারী, মধুখালী- এ অঞ্চলের জনগণ সব সময় নৌকায় ভোট দেয়। নয় বছর ধরে আওয়ামী লীগের সরকার ক্ষমতায়। দোলন বলেন,এ কথা বলা চলবে না যে অন্য সরকার ক্ষমতায় তাই উন্নয়ন হয় নাই। এ রাস্তা পাকা হয় নাই। আপনারা যারা শতভাগ নৌকা মার্কায় ভোট দেন, তাদের রাস্তা যদি পাকা না হয়, অন্য রাস্তা কেন পাকা হবে। আপনারা যাদের ভোট দিয়েছেন তারা কেন আপনাদের জন্য আনছেন না।
এ সময় তিনি এলাকার মানুষের দুঃখ-কষ্ট লাঘবে কাঁচারাস্তা পাকা করার ব্যবস্থা করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। বলেন, স্থানীয় চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে ফরিদপুর সদর আসনের এমপি এলজিআরডি মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের মাধ্যমে এ রাস্তা পাকা করার ব্যবস্থা করবেন তিনি।
এ সময় হাজারো জনতা তার বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়ে করতালি দেন ও উল্লাস প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তাদের কথা পৌঁছে দেবেন জানিয়ে সমবেতদের উদ্দেশে দোলন বলেন,নেত্রীকে বলব, এ অঞ্চলের মানুষ আপনাকে শতভাগ ভোট দেয়, এ অঞ্চল কেন পিছিয়ে থাকবে। নেত্রী যদি আপনাদের অবস্থার কথা শোনেন মনে কষ্ট পাবেন।
একই সঙ্গে দোলন জনগণের কাছেও একটি আবদার রাখেন। তিনি বলেন,আপনারা দয়া করে এখানকার জনপ্রতিনিধিদের ব্যর্থতার জন্য শেখ হাসিনার ওপর মনে কষ্ট নেবেন না। শেখ হাসিনা অত্যন্ত পরিশ্রম করছেন। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিরাজ রাখার চেষ্টা করছেন। জঙ্গিবাদ থেকে দেশকে মুক্ত করার জন্য কাজ করছেন। বাংলাদেশকে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ রাষ্ট্র হিসেবে দাঁড় করানোর জন্য চেষ্টা করছেন। স্থানীয় কোনো রাজনৈতিক নেতার ব্যর্থতার দায়ভার শেখ হাসিনার না। প্রয়োজনে আমরা স্থানীয় নেতা পরিবর্তন করে নেব। কিন্তু আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা। আগামী দিনেও নৌকায় ভোট দিয়ে শেখ হাসিনাকে জয়যুক্ত করার তাগিদ দেন তিনি।
উন্নয়নের জন্য সবাইকে মিলেমিশে কাজ করার তাগিদ দিয়ে দোলন বলেন,শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলেই উন্নয়ন সম্ভব। আজকে আমি রাস্তা পাকা করে দেয়ার অঙ্গীকার করতে পারলাম। কারণ রাষ্ট্রক্ষমতায় শেখ হাসিনা। উনি যদি না থাকতেন আমি করতে পারতাম না। কথা দিচ্ছি, যেভাবে পারি, যত দ্রুত পারি এ রাস্তা পাকা করার ব্যবস্থা করব।
এ সময় নিজের জন্যও সবার কাছে আশীর্বাদ চান আওয়ামী লীগের এই মনোনয়ন-প্রত্যাশী। তিনি বলেন,আমি এমপি হই আর না হই, আমার জন্য আশীর্বাদ করবেন যেন আপনাদের সেবা করে যেতে পারি। ভবিষ্যতে জাতীয় সংসদে যদি এলাকার প্র্রতিনিধিত্ব করতে পারি, ভৃত্যের মানসিকতা নিয়ে আপনাদের সেবা করে যাব, আপনাদের উন্নয়নে কাজ করব- এ অঙ্গীকার করে যাচ্ছি।
এর আগে দোলন তার তার পারিবারিক ঐতিহ্যগত জনসেবার কথা তুলে ধরেন। সেই ধারাবাকিতায় জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করার মানসিকতা নিয়ে তিনি তাদের মাঝে হাজির হয়েছেন বলে জানান ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের এই কারযনির্বাহী সদস্য।
দোলন বলেন,আমার বাড়ি আলফাডাঙ্গা উপজেলার কামারগ্রামে। আমার প্রপিতামহ কাঞ্চন মুন্সী। উনি মানুষের সেবা করে গিয়েছেন। তারপর ওনার ছেলে আমার দাদা এ অঞ্চলের মানুষের সেবা করে গেছেন। স্কুল করেছেন, হাসপাতাল করেছেন, কলেজ করেছেন, হাজার হাজার মানুষের চাকরির ব্যবস্থা করেছেন। খুলনায়, কলকাতায় নিজের বাড়িতে শত শত মানুষকে রেখেছেন। লেখাপড়া শিখিয়েছেন। এই ধারাবাহিকতায় তিনিও সমাজসেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছেন।
কাঞ্চন মুন্সী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান বলেন, আমি মনে করি রাজনীতি হচ্ছে সমাজসেবা। রাজনীতি হচ্ছে মানুষের সেবা। সমাজসেবা আরো বড় আকারে করতে গেলে রাজনীতি করতে হয়।
বক্তব্যের শুরুতে দোলন দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের ভূমিকার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন,গত নয় বছর ধরে দেশে সাম্প্রাদায়িক সম্প্রীতি বজায় আছে। কিন্তু এর আগে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকাকালীন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করেছে। সনাতন হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সারা দেশে আক্রমণ চালিয়েছিল।
দোলন বলেন,আমাদের সজাগ থাকতে হবে যেন বিএনপি-জামায়াত চক্র ক্ষমতায় আসতে না পারে। তারা চেষ্টা করছে পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতা দখল করার। আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। আমরা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও অন্যরা সবাই মিলে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করব।