আদর্শিক-ত্যাগী কর্মীকে মুল্যায়ন করলে রাজনীতির সেই পুরানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আসবে- তসলিম উদ্দিন রানা
৩০আগস্ট,রবিবার,নিজস্ব প্রতিবেদক,নিউজ একাত্তর ডট কম: সঠিক পরিচর্যা,ত্যাগ-মেধার অবমুল্যায়ন ও আদর্শের অভাবে বর্তমানে নেতা সৃষ্টি হচ্ছে না। সব জায়গায় হযবরল অবস্থা। কেউ কারো নই। সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। কারো কাছে কোন দায় দায়িত্ব আছে বলে মনে হয় না। সবাই ক্ষমতা আর টাকার নিকট জিম্মি বলে মনে করি। গুটিকয়েক যোগ্য লোক মন্ত্রী, এমপি, পদে আসলেও তারা একই অবস্থা বলে মনে হয়। নিজের পদ ঠিক রাখার জন্য তারাও তেলবাজি, চামচামি ও যত রকমের অসংগতি আছে তা করে যাচ্ছে। সবাই এখন ক্ষমতা আর টাকা মুখী। আর কয়েকজন মাঠ কাপানো নেতা পদবী ও ক্ষমতা পেয়ে কিছু করতে চাইলেও ব্যবসায়ী, হাইব্রিড ও সিন্ডিকেটের বলয়ের কারণে পেরে উঠতে পারছেনা। তবুও তারা হল আমাদের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতীক।
এককালে রাজনীতি ছিল রাজার নীতি। যাদের অর্থ সম্পদ,পরিবারের ঐতিহ্য, শিক্ষার আলো ছিল তারা রাজনীতি করত। নিজের পকেটের টাকা খরচ করে সব মিছিল মিটিং করত।এমনকি ইউনিয়ন লেবেলের নেতাকে সবাই শ্রদ্ধা আর সম্মান করত। তাদের বাড়ি ঘর ছিল মানুষের প্রাণ কেন্দ্র। মানুষ মানুষের জন্য কাজ করে যেত। বিপদে পড়লে এগিয়ে যেত।অন্যায়কে প্রশয় দিতনা। আমাদের এলাকায় একজন উপজেলার নেতা রাজনীতি করতে গিয়ে নিজের সব জমি বিক্রি করে সংগঠন করেছে কিন্তু দুঃখের বিষয় হল বর্তমানে তাকে কোন পদে রাখেনি কারণ টাকা। সেসময় রাজনীতি ছিল রাজার নীতি আর বর্তমানে তার সম্পুর্ন উল্টা। কেননা দেখতে পাবে অনেক মানুষ ক্ষমতার কারণে আঙুল ফুলে কলা গাছ হয়েছে। জীবনে রাজনীতি কি জিনিস জানেনা, রাজনীতি কেন করে তার খবর ছিল না। তারা ক্ষমতার জন্য দলে এসে টাকা দিয়ে পদবী কিনে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যায়। আর অনেকে রাজনীতিকে ব্যবসা হিসাবে ব্যবহার করেছে। যে রাজনীতি রাজনীতিবিদের কাছে নেশা ছিল সেই রাজনীতি এখন পেশা হিসেবে ব্যবহার করছে এক শ্রেণীর ধান্ধাবাজ লোক। যা অত্যন্ত দুঃখজনক ও ক্ষতিকর দিক। ছাত্র রাজনীতি করতে গিয়ে অনেক মেধাবী সংগঠক নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়ে কাজ করেছে কিন্তু দুঃখের বিষয় হল আজকের দিনে অনেক ছাত্র ফাও খাওয়া,হলের সিট ও ক্ষমতার জন্য রাজনীতিতে যোগ দেয়। একসময় তারা নেতা বনে যায় এমনকি সব কিছু তারা নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের ক্ষমতার দাপটে সবাই মেধাবী, ত্যাগীরা হারিয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে নেতা জন্ম নিবে তারা যদি আদর্শিক ও ত্যাগী নাহয় তাহলে কিভাবে দেশ চালাতে পারবে তা বোধগম্য নয়। মুলে যদি গলদ হয় তাহলে সব শেষ। রাজনীতি বর্তমানে রাজনীতির মধ্যে নেই। সম্ভবত রাজনীতির অকাল সময় পার করছে। ছাত্র রাজনীতি শুরু করে সব অঙ্গ সংগঠন নতুন এক সংস্কৃতি শুরু হয়েছে তা হল তেলবাজি,টাকা, ক্ষমতা, নেতার কোটা, আত্ত্বীয়তা, চামচামি আর হাইব্রিডদের প্রতিষ্ঠা। এসব হওয়ার পিছনে আমাদের এক শ্রেণীর নেতারা দায়ী। তারা সামান্য কিছুর জন্য আজ আদর্শ চ্যুত হয়ে বিভিন্ন জায়গায় আমাদের আদর্শ ও ত্যাগী কর্মীদের বঞ্চিত করে হাইব্রিড, চামচা, টাকা, ক্ষমতা, নেতার আজ্ঞাবহ ব্যক্তিকে নেতা বানিয়ে দলের তেরেটা বাজিয়ে দিচ্ছে। যা ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য হুমকি মুখে পতিত হচ্ছে। যা অশুভ লক্ষণ।নতুন প্রজন্ম আজ আদর্শিক ও ত্যাগ কি জিনিস তা বেমালুম ভুলে গেছে। তারা বেশী ভাগ স্রোতের সাথে থাকতে চাই বিধায় রাজনীতির মাঠ আজ কর্মী শুন্যের দিকে ধাবিত হচ্ছে। ছাত্র,যুব সংগঠন থেকে শুরু করে মুল সংগঠনে আজ অযোগ্য,অথর্ব,হাইব্রিড,আত্ত্বীয়করন,ব্যবসায়ী লোকে ভরা তার প্রধান কারণ হল ক্ষমতা।ক্ষমতা আজ আমাদেরকে অন্ধকারে নিয়ে গেছে। এই ক্ষমতার জন্য সব জায়গায় আমরা আদর্শিক, মেধাবী,ত্যাগী লোকজন সরিয়ে দিয়ে হাইব্রিড,চামচা,নিজস্ব লোক,আত্ত্বীয়তার লোকজন বসিয়ে দিয়ে দেশ ও দলের তেরেটা বাজিয়ে দিচ্ছি যা বলার বাহুল্য নেই। আগামী প্রজন্মের জন্য অশনিসংকেত। যা অত্যন্ত ক্ষতিকর ও অমানবিক। রাজনীতি রাজনীতির জায়গা নেই বললে চলে। রাজনীতি এখন অরাজনৈতিক ব্যক্তির নিকট চলে যাচ্ছে। কিন্তু কেন হচ্ছে? কি জন্য হচ্ছে? তার তদুক্তর দেওয়া কঠিন। তবুও বলতে হয় রাজনীতি হল একটি নীতি এবং আদর্শের প্রতিষ্ঠান। প্রতিটি রাজনৈতিক দল হল এক একটি পাঠশালার প্রতিষ্ঠান। সব কর্মিরা হল এই প্রতিষ্ঠানের ছাত্র। প্রত্যেক নেতারা হল তার শিক্ষক। এই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা দেয়া হয় সামাজিক, নীতি, আদর্শ, সততা, দেশপ্রেম আর সাংগঠনিক দক্ষতা।কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হন তারা যারা মেধাবী ছাত্র। প্রত্যেক শিক্ষক নিয়ন্ত্রণ করেন কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষক ভাল হলে প্রতিষ্ঠানের মানও ভাল হয়। যে প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক যত সে প্রতিষ্ঠান তত ভালো চলবে আর খারাপ হলে পড়ালেখার মানও খারাপ হবে। তদ্রূপ রাজনীতির প্রতিষ্ঠানের নেতারা যদি খারাপ হয় কর্মীরা খারাপ হবে এটাই নির্ধারিত।যদি ভালো নেতা হয় কর্মীরা ভালো হবে এটাই চিরাচরিত নিয়ম। আগে রাজনীতির প্রতিষ্ঠানের নেতা হতেন যারা তারা আদর্শিক,ত্যাগী,মেধাবী, সাংস্কৃতিক,বিবেকবান,নীতিবান,কথাবার্তার ধরন,সামাজিক, কর্মীবান্ধব লোক। তেমনি কর্মীরা ছিল তাদের মত। গ্রামে কথা আছে ফুল গাছে ফুল ধরে আর মদর গাছে কাটা থাকে। তাই নেতা যেমন হবে কর্মী তেমন হবে। সেই সময়ে রাজনীতি ছিল অত্যন্ত সুন্দর, আদর্শের চর্চা কেন্দ্র, ত্যাগের মহিমান্বিত উদ্ভাসিত নাম। আর বর্তমানে
রাজনীতির নেতা হন হাইব্রিড,চামচা,ব্যবসায়ী,তেলবাজ। যে যত চামচামি,তেলবাজি করতে পারবে সে তত বেশি বড় নেতা বা যার যত বেশি টাকা আছে সে বড় নেতা। রাজনীতি নামক প্রতিষ্ঠান পরিচালক হয়ে পরিচালিত করে। তার ধারা সৃষ্টি হবে হাইব্রিড আর চামচা। আর ব্যবসার মত টাকা ইনকাম করার জন্য চারদিকে আরও বেশি টাকাওয়ালা লোক খুজবে। আর রাজনীতি হয়ে যায় একধরনের ব্যবসা যা ভবিষ্যতের জন্য অশনিসংকেত।
রাজনীতিকে তার নিজস্ব গতি হারিয়ে যায়। যে রাজনীতি ছিল আদর্শ ও ত্যাগের আর তা হল ক্ষমতা আর টাকার। এই অপরাজনীতির বর্তমানে আরও বেশি এগিয়ে যাচ্ছে। সেজন্য রাজনীতিবিদ ও দক্ষ পার্লামেন্টিয়ান তোফায়েল আহমেদ বলেন - রাজনীতি এখন রাজনীতিবিদের কাছে নাই। সত্যি কথা রাজনীতি বিপর্যয়ের মুখে পতিত হচ্ছে। তার থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য সঠিক জায়গায় সঠিক নেতা বানাতে হবে।- তসলিম উদ্দিন রানা,সাবেক ছাত্রনেতা