বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে হলে নারীর ক্ষমতায়ন একটি অন্যতম শর্ত
২০ডিসেম্বর,রবিবার,নিউজ একাত্তর ডট কম: গ্রামীণ জীবনে এখন নারীর ক্ষমতায়নের রূপান্তর চলছে। অর্থাৎ গ্রামীণ নারীরাও এখন জীবন উন্নয়নের রূপান্তরে সরব ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।
নারীদের জীবনমান পরিবর্তন হচ্ছে। আর তাতে নারীরাই সক্রিয় অংশ নিচ্ছেন। আবার নারীরাই নারীদের উন্নয়নের সবচেয়ে বড় অংশীদার হয়ে উঠেছেন। তবে সময় এখন নারীর জীবন রূপান্তরের।
সারা বিশ্ব এখন নারী উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরব। শুধু তাই নয়, নারীদের টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা এসডিজি অর্জনে বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে উন্নয়নকে টেকসই করতে নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য দূর করতে হবে।
কৃষিক্ষেত্র ও গৃহস্থালি থেকে শুরু করে সমাজ পরিবর্তন ও উন্নয়নে নারীদের অংশগ্রহণ এখন অনেক বেড়েছে। নারীর এ অবদানকে পরিপূর্ণ মূল্যায়ন করার সময় এসেছে। নারীর অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, নারীর সক্ষমতা বাড়ানো, স্বাবলম্বী করা এবং নারীর নিজের ভাগ্য নিজেরই গড়ার সুযোগ করে দেওয়ার মাধ্যমে দেশের উন্নয়নের মূল ধারায় নারীদের যুক্ত করতে হবে। নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় সংগঠন, রাজনৈতিক দল এবং সব প্রতিষ্ঠানকে আরও সম্পৃক্ত হয়ে সহযোগী মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হবে।
সমাজে নারীর অধিকার নিশ্চিতে আইনের ইতিবাচক প্রয়োগ হচ্ছে। শুধু আইন দিয়ে নয়, মানসিকতার ইতিবাচক পরিবর্তনে আরও সচেষ্ট হতে হবে। গ্রাম্য সমাজে নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণের ফলে অর্থনৈতিক ও সামাজিক আবহে নারীর অবদান এখন দৃশ্যমান। তবে সামগ্রিক উন্নয়নে আরও অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। অতীতে পারিবারিক কাজে পুরুষের নির্দিষ্ট কিছু ভূমিকা ছিল। বর্তমানে সেসব কাজেও নারীরা সমতালে অংশ নিচ্ছেন।
বর্তমানে বাংলাদেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী। এ অর্থে নারীর উন্নয়ন ছাড়া দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন অসম্ভব। নারীরা যেসব ক্ষেত্রে শ্রম দিচ্ছেন তাদের সব ধরনের শ্রমের স্বীকৃতি দিয়ে দেশের উন্নয়নকে ভিন্ন মাত্রায় ত্বরান্বিত করা সম্ভব। দেশের উন্নয়নের ধারায় নারীদের সংখ্যা আরও ইতিবাচক করতে কাজ করার অবকাশ আছে।
এখন বাংলাদেশের গ্রামীণ নারী সমাজের সর্বত্র উন্নয়ন দৃশ্যমান। সমাজ এবং অর্থনীতিতে নারীর ভূমিকা সরব। গ্রামীণ নারী সমাজে সমঅধিকার, নেতৃত্ব ও ক্ষমতায়ন বিষয়ে আরও বেশি সচেতন হতে হবে। ঘরোয়া কাজে নারীর অবদান স্বীকৃতির মাধ্যমে দেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন করা সম্ভব।
দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান উৎপাদনে বাংলাদেশের উন্নয়নের নারী এখন চালিকা শক্তি। তাদের সামর্থ্য বাড়ানোর সুযোগ করে দিতে হবে। গ্রামীণ নারীর অর্থনৈতিক মুক্তির মাধ্যমে নারী-পুরুষ সমতা প্রতিষ্ঠায় সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। যদি গ্রামীণ সমাজ ব্যবস্থায় নারীর সব ধরনের বৈষম্য দূর করা যায় তাহলে আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক উন্নয়নকে দীর্ঘমেয়াদে টেকসই করা সম্ভব।
অর্থনীতিতে নোবেলজয়ী অর্মত্য সেন বলেছিলেন, মানব সূচক উন্নয়নে ভারতের চেয়ে বাংলাদেশের নারীরা অনেক এগিয়েছে। এটি জাতীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব আনবে। তাছাড়া দেশের শীর্ষ কর্মপদে বাংলাদেশ নারীদের ক্ষমতায়ন দৃশ্যমান করেছে। এটিরও একটি শুভ প্রভাব অনিবার্য।
সাহস, যোগ্যতা, আত্মসম্মানবোধ ও সুশিক্ষার মাধ্যমে গ্রামীণ নারী তার নিজের সমযোগ্যতা প্রতিষ্ঠা করছে। নারীকে পুরুষের মত সমসুযোগ ও নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করতে পারলেই অর্থনৈতিক মুক্তি সুনিশ্চিত। মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে হলে গ্রামীণ নারীর ক্ষমতায়ন একটি অন্যতম শর্ত।
কোরানে কারিমে নারীর প্রতি অত্যন্ত সম্মান দেখিয়ে নারী নির্যাতনকারীকে ঘৃণ্য অপরাধী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। যেসব কারণে নারীরা সমাজে নির্যাতিত হয়, সেসব থেকে বিরত থাকতে মুসলমানদের আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ দিয়েছেন। নারী নির্যাতনকারীকে প্রতিরোধ করার কথাও আলেমরা বলে থাকেন। দেশে নারী নির্যাতনের ঘটনা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এসবের মূলে রয়েছে নারীর প্রতি মমত্ববোধ, সম্প্রীতি ও ভালোবাসার অভাব। ক্ষেত্রবিশেষে নারীর সম্পদের মোহ ও লালসা মানুষের অন্তরকে লোভাতুর করে তোলে। এ কারণে নির্যাতনের শিকার হতে হয় নারীকে। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বজুড়েই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নানা উপায়ে নারীর প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতন চলছে। ধর্ষণ, নারী পাচার, এসিড নিক্ষেপ, যৌতুকের জন্য নির্যাতন, রাস্তাঘাটে উত্ত্যক্তের শিকারসহ নানা উপায়ে নারীরা নির্যাতিত হচ্ছে। ইসলাম পরিপন্থী এসব লোমহর্ষক নির্যাতন বন্ধের উপায় খুঁজে বের করে সমস্যার সমাধানে ধর্মপ্রাণ জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে চেষ্টা চালানো খুবই জরুরি। নারী নির্যাতন বন্ধে অভিভাবক মহলের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করা দরকার। সবাইকে উপলব্ধি করতে হবে যে, নারী-পুরুষ মিলে যে ঘর-সংসার, বহু ঘর নিয়ে যে মুসলিম সমাজ, সেখানে প্রত্যেকেরই গুরুত্ব, মর্যাদা, অধিকার ও ভূমিকা রয়েছে। ইসলামি জীবনদর্শনে নারীর প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতন প্রতিরোধে পবিত্র কোরানের সুরা আন নুর-এ আল্লাহ তায়ালা যে সুন্দরতম সামাজিক বিধিবিধান দিয়েছেন, তা অত্যন্ত কার্যকর ও ফলপ্রসূ। আল্লাহ নির্দেশিত এসব বিধান যথাযথভাবে কার্যকর হলে নারী নির্যাতন চিরতরে বন্ধ হবে এবং মানবজীবনে শান্তি ও সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠিত হবে। সুতরাং নারী নির্যাতন প্রতিরোধে ইসলামের সামাজিক বিধিবিধানের ব্যাপক প্রচার ও প্রসার করতে সমাজের ধর্মীয় নেতাদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা। কোন পথে সমস্যার সমাধান। ইসলাম দ্বান্দ্বিকতাকে সমর্থন করে না; বরং সব দ্বান্দ্বিকতার সুষম সমাধান দিয়ে শান্তিময়তার নিশ্চয়তা বিধান করে। ইসলামের দৃষ্টিতে নারী-পুরুষ একজন আরেকজনের প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, বরং পরিপূরক। এ অপূর্ণতা নিরসনে একজনকে আরেকজনের পরিপূরক করে সৃষ্টি করা হয়েছে। এ সম্পর্কের ভিত্তি টানাহিঁচড়া, দর কষাকষি ও দ্বান্দ্বিকতা নয়; এ সম্পর্ক হলো প্রেমময় ভালোবাসার। এখানে নির্যাতন, অবজ্ঞা ও অবহেলার কোনো সুযোগ নেই।- লেখকঃ সাবরিন জেরিন, সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট ও সহ সম্পাদক, নিউজ একাত্তর ডট কম।